করোনা মহামারির ব্যাপ্তিকাল তিন বছর হতে চলল। ইতিমধ্যে সারা বিশ্বে ৬৫ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অর্থনীতি হয়েছে বিপর্যস্ত। ল্যানসেট কমিশন বলছে, মহামারি, মৃত্যু ও দুর্ভোগের পেছনের কারণ বহুমাত্রিক বৈশ্বিক ব্যর্থতা। মোটাদাগে ১০টি ব্যর্থতাকেই সামনে এনেছেন কমিশনের সদস্যরা।
অতীতের অন্যান্য বৈশ্বিক বা আঞ্চলিক জনস্বাস্থ্য সমস্যার মতো করোনা মহামারিকে গুরুত্ব দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এই জনস্বাস্থ্য সাময়িকী। মহামারি শুরুর দিকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতেই তারা চীনের বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের করোনাবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিল। অজ্ঞাত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত প্রথম দিকের রোগীদের সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্ববাসী, জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন ওই সব প্রবন্ধ থেকে।
করোনাভাইরাস, এ ভাইরাসের ধরন, করোনার উপসর্গ, রোগের জটিলতা, রোগের ব্যাপ্তিকাল, ভাইরাসের সম্ভাব্য উৎপত্তিস্থল, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার গতি, বিধিনেষেধের প্রভাব, মাস্কের ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি, টিকা ও ওষুধ আবিষ্কার, টিকার পরীক্ষা–নিরীক্ষা, টিকার কার্যকারিতা, টিকা বিতরণ, করোনায় মৃত্যু, ন্যায্যতা—এ রকম বহু বিষয় নিয়ে বহু দেশের বিজ্ঞানী, গবেষক, জনস্বাস্থ্যবিদদের গবেষণা প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশ করে চলেছে ল্যানসেট।
করোনা মহামারির ব্যাপকতা উপলব্ধি করে ল্যানসেট চারটি প্রধান বিষয় সামনে রেখে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ‘ল্যানসেট কোভিড–১৯ কমিশন’ গঠন করে। বিষয়গুলো ছিল: কী উপায়ে মহামারি সবচেয়ে ভালোভাবে দমন করা যায়, তা নিয়ে সুপারিশমালা তৈরি করা; মহামারির কারণে উদ্ভূত মানবিক সংকটগুলো তুলে ধরা; মহামারির কারণে উদ্ভূত আর্থিক সংকটগুলো চিহ্নিত করা এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায্য ও টেকসই বিশ্বের ধারণা দেওয়া।
জননীতি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, রোগতত্ত্ব, টিকাতত্ত্ব, অর্থনীতি ও অর্থায়ন পদ্ধতি, টেকসইবিষয়ক বিজ্ঞান ও মানসিক স্বাস্থ্য—এসব বিষয়ের ২৮ জন বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞ নিয়ে এ কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের অধীনে ১২টি বিষয়ভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এসব টাস্কফোর্সে মোট ১৭৩ জন বিশেষজ্ঞ যুক্ত ছিলেন। টাস্কফোর্সের সদস্যরা দুই সপ্তাহে একবার বা মাসে একবার কমিশনের সঙ্গে সভা করতেন। প্রতিটি টাস্কফোর্স তাদের কাজের অগ্রগতি বা ফলাফল নিয়মিতভাবে কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করত এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রবন্ধ আকারে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সাময়িকীতে প্রকাশ করত।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলন সামনে রেখে কমিশন প্রথম বিবৃতি প্রকাশ করে ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। করোনার গণটিকাকরণ কার্যক্রম শুরুর প্রাক্কালে ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কমিশন দ্বিতীয় বিবৃতি প্রকাশ করে। জি–২০ সম্মেলন সামনে রেখে কমিশন তৃতীয় বিবৃতি প্রকাশ করে ২০২১ সালের অক্টোবরে।