দালাল না ধরে নিজে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে ‘ঘাটে ঘাটে’ হয়রানির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ব্যক্তি। এ ক্ষেত্রে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর ‘অযথা ভুল’ ধরে কর্মকর্তারা সেটি গ্রহণ করেন না। সংশোধন করে জমা দিলেও আবার আরেকটি ভুল ধরা হয়। এভাবে ভুল শুধরে আবেদন জমা দিতে দিনের পর দিন ছোটাছুটি করতে হয়।
তবে দালাল ধরে আবেদন করলে আবেদনপত্রে ‘বিশেষ চিহ্ন’ দেওয়া থাকে। এতে এক দিনেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ছবি তোলার সুযোগসহ দ্রুত পাসপোর্ট পান আবেদনকারীরা।
সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা কার্যালয়ের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন অর্ধশতাধিক ‘ভুক্তভোগী’। তাঁদের দাবি, প্রতিদিন গড়ে ৮৫০ জন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। এর ৮৫ শতাংশ আবেদনকারীই দালালের শরণাপন্ন হন। এতে সরকারি ফির অতিরিক্ত খরচ হয় আড়াই হাজার টাকা। কোনো জটিলতা থাকলে পাসপোর্ট পেতে আরও বেশি টাকা দিতে হয়। প্রতিদিন কার্যালয়টিতে গড়ে ১৮ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন হয়।
নগরের দক্ষিণ সুরমার আলমপুরে পাসপোর্ট কার্যালয়ের অবস্থান। এখানে সক্রিয় ৫০ থেকে ৬০ জন দালাল। যাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা দাবি করেন, শতাধিক ট্রাভেল এজেন্সি পাসপোর্টপ্রত্যাশীদের আবেদনপত্র পূরণ করে থাকে।
দালাল ও ট্রাভেল এজেন্সির পূরণ করা আবেদনপত্র শনাক্তে বিশেষ চিহ্ন দেওয়া থাকে। এসব আবেদনকারী হয়রানি ছাড়াই পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে পারেন। চিহ্ন হিসাব করে দালাল ও এজেন্সিগুলো প্রতিদিনের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সন্ধ্যায় কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে ২ হাজার ১০০ টাকা কর্মকর্তাদের দিতে হয়।
তবে দৈনিক গড়ে ১৮ লাখ টাকা অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন সিলেট বিভাগীয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আবেদনপত্র পূরণ করতে গিয়ে অনেকে নাম, জন্মস্থান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর লেখায় ভুল করছেন। যথাযথ তথ্য দিয়ে আবেদন না করার কারণে তাঁদের সংশোধন করতে বলা হয়ে থাকে। তাঁর দাবি, দালাল বা ট্রাভেল এজেন্সিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয় না। আবেদনে কোনো বিশেষ চিহ্নও থাকে না।